প্রাচুর্য,
প্রভাবে রাজ্য ষোলকলায় পূর্ণ। দুঃখ এই, রাজার পুত্র নেই। বংশবিলোপ সম্ভাবনায়
ভীষণ চিন্তিত রাজা। একদিন পুত্র কাঙ্গাল রাজাকে দরবেশ বললেন, রাজপুত্র হবে আপনার তবে-বারো দিনের রাজপুত্রকে বিয়ে দিতে হবে
বারো বছরের কন্যার সাথে এবং রাজপুত্র ও রাজবধূ চলে যেতে হবে বনবাসে। তাই হবে তবুও রাজপুত্র চাই রাজার এবং হলোও তাই। বারো বছরের উজির কন্যা রূপবান বারো দিনের রাজপুত্র স্বামী রহিমকে নিয়ে চলে গেলো
বনবাসে। স্ত্রী রূপবান স্বামী রহিমকে কোলে পীঠে করে বহু প্রতিকূলতায়
কাটাতে লাগলো বনজীবন। শৈশব, কৈশর পেরিয়ে প্রদীপ্ত
যৌবনে এসে খেই হারালো রহিম। রহিম এবার মত্ত তাজেলের
প্রেমে। সতী রূপবানের জীবনে ঝড় উঠলো লাঞ্চনা-বঞ্চনা
তথা রহিমকে হারানোর। রূপবান লাঞ্চনার কষ্টদৃশ্য সহ্য করতে না পেরে প্রতিবাদ কন্ঠে চিৎকার করে মঞ্চে উঠে গেলো ‘রূপবান’ যাত্রা পালার এক কিশোর দর্শক, নাম জাহেদ আলী মংলা; পরবর্তিতে যিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সুপরিচিত হয়েছেন মংলা ভাই নামে। হ্যাঁ ৪২ বছর পূর্বে নেত্রকোণা-দুর্গাপুরের কাকৈরগড়া ইউনিয়নের নিজ গ্রাম গোপালপুরে অনুষ্ঠিত ‘রূপবান’ যাত্রাপালা বদলে দেয় প্রতিভাবান জাহেদ আলী মংলা’র জীবন ভাবনা। পল্লী সংস্কৃতি, কবিতা চর্চা, গান এবং যাত্রাশিল্পের উৎকর্ষতার চাদরে জড়িয়ে নেন নিজেকে। নিজেই রচনা করেন বিভিন্ন কাহিনীঘেঁষা নাটক, মঞ্চস্থ হয় বৃহত্তর ময়মনসিংহ, সিলেট, সুনামগঞ্জ সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সহস্র সহস্র মানুষের মনে গেঁথে গেলো একটি নাম, জাহেদ আলী মংলা। ক্রমাগত তিনি হয়ে উঠলেন যাত্রাশিল্পের পুরোধা।
তথা রহিমকে হারানোর। রূপবান লাঞ্চনার কষ্টদৃশ্য সহ্য করতে না পেরে প্রতিবাদ কন্ঠে চিৎকার করে মঞ্চে উঠে গেলো ‘রূপবান’ যাত্রা পালার এক কিশোর দর্শক, নাম জাহেদ আলী মংলা; পরবর্তিতে যিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সুপরিচিত হয়েছেন মংলা ভাই নামে। হ্যাঁ ৪২ বছর পূর্বে নেত্রকোণা-দুর্গাপুরের কাকৈরগড়া ইউনিয়নের নিজ গ্রাম গোপালপুরে অনুষ্ঠিত ‘রূপবান’ যাত্রাপালা বদলে দেয় প্রতিভাবান জাহেদ আলী মংলা’র জীবন ভাবনা। পল্লী সংস্কৃতি, কবিতা চর্চা, গান এবং যাত্রাশিল্পের উৎকর্ষতার চাদরে জড়িয়ে নেন নিজেকে। নিজেই রচনা করেন বিভিন্ন কাহিনীঘেঁষা নাটক, মঞ্চস্থ হয় বৃহত্তর ময়মনসিংহ, সিলেট, সুনামগঞ্জ সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সহস্র সহস্র মানুষের মনে গেঁথে গেলো একটি নাম, জাহেদ আলী মংলা। ক্রমাগত তিনি হয়ে উঠলেন যাত্রাশিল্পের পুরোধা।
মঞ্চ জীবনে জাহেদ আলী মংলা’র বিভিন্ন মঞ্চ নাটকের
মধ্যে- মায়ের কোলে কাঠের পুতুল, সতীর কোলে জারজ সন্তান, অভীশপ্ত জংলী কন্যা, রক্তে রাঙ্গা বাসর, জীবন সাথী, প্রেমের জলন্ত প্রমান, বিনামূল্যে দাসী কাহিনীগুলো অন্যতম। এগুলোর মাঝে ‘মায়ের কোলে কাঠের পুতুল’ একাধিক বার বিটিভি ও চ্যানেল ওয়ান এ সম্প্রচার হয়েছে। অথচ অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় হলো, কাহিনীগুলোর কোন পান্ডুলিপি নেই। যেনো তাঁর মেধা-মনন
কাহিনীগুলোর ধূসর পান্ডুলিপি। স্মৃতিশক্তি তাঁর এতই
তিক্ষ্ম যে, বৃদ্ধের বারান্দায় দাঁড়িয়েও অনর্গল বলে যান প্রতিটি কাহিনী পর্ব। সদাহাস্য মংলা’র কন্ঠে এখনও অমৃতসুধা, কথায় ছন্দের স্পন্দন; এখনও তাঁর হৃদয়নদীতে ভালোবাসার পূর্ণ জলোচ্ছ্বাস। ষাটের বৃত্তে পা দেয়া মংলা’র সাথে কথা বললে মনে
হয়, যেনো এখনও তিনি দাঁড়িয়ে আছেন আলো ঝলমল কোন যাত্রামঞ্চে। যেনো পল্লীর এক মাঠে জ্বলছে অনেকগুলো হ্যাজাক, মাঝখানে একটি মঞ্চে বসে আছেন কাঞ্চনপুরের রাজা, কাউকে নির্দেশ দিচ্ছেন নির্বাসনের, খোঁজ নিচ্ছেন রাজ্যের-চারদিকে সভাসদ, এরই মাঝে মাটিতে শিকড় গেঁথে দাঁড়িয়ে আছেন স্বপ্নের মতো বড় একজন মানুষ; জাহেদ আলী মংলা। পেশাগত উৎকর্ষ কিংবা নেশা- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সূচনা পর্বটি মঞ্চনেশা হলেও একসময় তা পেশায় পরিনত হয় কিংবা পরিনত হয় জীবনবোধে। তিনি আরো বলেন, পেশা বলতে এখনকার মত
পুরো বানিজ্যিক নয়; ছিলো প্রকৃত অভিনয়
তথা সংস্কৃতি চর্চার কমিটম্যান্ট বা প্রতিশ্রুতি। হ্যাঁ জনশ্রুতি আছে যে, জাহেদ আলী মংলা প্রকৃত
সংস্কৃতি চর্চার প্রতিশ্রুতি নিয়েই কাজ করতেন। কোন জায়গা থেকে আমন্ত্রণ
এলেই ছুটতেন দলবল নিয়ে। অসংখ্য মানুষকে প্রকৃত মনোরঞ্জন দিয়েই তৃপ্ত হতেন তিনি, সহস্র মানুষের ভালোবাসায় হতেন সিক্ত। জীবনভর ভালোবাসা কুঁড়িয়েছেন, তাই দেশের অনেক গুণী
মানুষের সাথে ছিলো মনন সম্পৃক্ততা, যেমন সম্পৃক্ততা কিংবা সখ্য ছিলো বরেণ্য শিল্পী কদ্দুস বয়াতীর সাথে। জাহেদ আলী মংলা নিজেও বরেণ্য, তাই সখ্য এখনও আছে
দেশের বহু বরেণ্যদের সাথে। শুধু আমরাই নিজেদের
মননের দৈন্য কাটিয়ে উঠতে পারিনি, বরণ করতে পারিনি আমাদের
মানুষ, আমাদের পড়শি যাত্রাশিল্পের এ দরদি প্রতিভাকে। কিন্তু এ নিয়ে মংলা’র যেনো কোন আকাক্সা
কিংবা অভিমান নেই বরং অতিবাহিত সময় একবিন্দুও তাঁকে পরাস্ত করতে পারেনি। যেনো তাঁর ঋদ্ধ মননে কখনও শৈথিল্য প্রবেশের অনুমতি পায়নি। তিনি এখনও জীবিত মঞ্চ ভাবনা এবং সৃজনশীলতায়।
পল্লী সংস্কৃতির চেতনা বিকশিত, গভীর আবেগস্পর্শী মংলা একদিকে যেমন যাত্রাশিল্পের প্রবাদ প্রতিভা তেমনি, একজন নিভৃতচারী শুদ্ধ কবিতাকর্মী। তাঁর কবিতায় নিসর্গ, প্রণয়-বিরহ, মানুষের অন্তর্গত রণ, স্বদেশ ও সমাজ চমৎকার বুননে বর্তমান। রাধা-কৃষ্ণের প্রেমলীলা
সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব ভাবনাকে কবিতায় রূপ দিয়েছেন এভাবে, “কৃষ্ণ প্রেমে বাধা রাধার প্রাণ/ও সখিরে সে’যে শুনলে বাঁশি হয় উদাসী/ডরায় না কূলমান/...
জাহেদ মংলা ভাই কয় কৃষ্ণ রাধা/ দু’ই জনা এক সুতায় বাধা।” তাঁর অনেক কবিতা রূপক, চিত্রকল্প,
বুননশৈলীতে বিদ্দ্যুচ্চমক সৃষ্টি করে; যদিও কবিতাগুলোর গঠন পুরোপুরি আধুনিক বাংলা কবিতার মতো নয়। জাহেদ আলী মংলা কবিতা ছাড়াও দু’শোর বেশি গান লিখেছেন, গানগুলোর বেশিরভাগই
মারফতি, মুর্শিদী। গান, কবিতা, যাত্রা এই ত্রি-গুণ
ছাড়াও ব্যক্তি মংলা এক অসাধারণ চরিত্র।